এখনি একটা খাতা পেন নিন। আর মাঝখান থেকে একটা দাগ কেটে দুটো ক্ষোভ তৈরি করুন। এবার এক পাশে একটা নরমাল দিনে সারাদিনে আপনি যা যা কাজ করেন তার একটা লিস্ট বানিয়ে ফেলুন। আর অন্যপাশে আপনার জীবনে কি কি স্বপ্ন রয়েছে। আপনার জীবনের লক্ষ্য কি? আপনি জীবনে কী কী অর্জন করতে চান? সেগুলো সব লিখে ফেলুন। এবার বাঁদিকের লিস্টের সাথে ডান দিকের লিস্টের একবার তুলনা করে দেখুন। প্রতিদিন আপনানি যে কাজ করেন তার মধ্যে থেকে সত্যি বলতে কটা কাজের মধ্যে আপনার জীবনের লক্ষ্য রয়েছে। আপনি জীবনে যা যা অর্জন করতে চান, সেগুলো পূরণ করার দিকে আপনাকে কটা কাজ নিয়ে যাচ্ছে। আর কটা কাজ আপনার জীবনের লক্ষ্য পূরণ করা থেকে দূরের দিকে আপনাকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। হয়তো এখন প্রতিদিন আপনি যা যা কাজ করেন তার মধ্যে থেকে দশটার মধ্যে আটটা কাজ আপনাকে আপনার জীবনের লক্ষ্য পূরণ করতে পারা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তাই যদি আপনি জীবনে সফলতা পেতে চান, তাহলে সবার আগে আপনাকে নিজের ডেইলি রুটিন থেকে non-essential কাজ অর্থাৎ যেগুলো আপনাকে আপনার জীবনের লক্ষ্য পূরণের থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

সেগুলো করা বন্ধ করে, এসেনশিয়াল কাজ অর্থাৎ যেগুলো আপনাকে আপনার জীবনের লক্ষ্য পূরণের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে সেগুলো বেশী করে করতে শুরু করতে হবে। সেটা কিভাবে করবেন এবং সেগুলো করার মাধ্যমে আপনার জীবনে কি কি লাভ হবে? সেটাই আজ এই ভিডিওতে গ্রেগ ম্যাকিউনের লেখা বই এসেন্সিয়ালিজম থেকে আমি আপনার সঙ্গে শেয়ার করব।
আমাদের সবসময় পছন্দের বিষয় থাকে:
এই জীবন সমস্যার সমাধান করার জন্য কুকুর নিয়ে তিনটি গ্রুপে ভাগ করে একটি এক্সপেরিমেন্ট করা হয়। প্রতিটা গ্রুপের কুকুরদের একটা বড় বাক্স মধ্যে রাখা হয়। এদের মধ্যে প্রথম গ্রুপের কুকুরদের মাইল ইলেকট্রিক শক দেয়া হয়। এবং সেই বাক্সের মধ্যে একটা হাত রেখে দেওয়া হয় যেটাতে নাড়া দেওয়ার সাথে সাথে ইলেকট্রিক শক অফ হয়ে যায়। দ্বিতীয় গ্রুপের কুকুরদেও ইলেকট্রিক শক দেয়া হয় কিন্তু সেই বাক্সের মধ্যে একটা হাতল রেখে দেওয়া হয়, তবে সেই হাতল অকেজো করে রেখে দেওয়া হয়। আর তৃতীয় গ্রুপের কুকুরদেরও একটা বাক্সে রাখা হয় কিন্তু এদের কোনো ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়নি। এরপর তিনটে গ্রুপের কুকুরদের একসাথে একটা বড় বাক্সের মধ্যে রাখা হয়। যে বাক্স টা একটা ডিভাইডার দিয়ে দুটো পার্ক করে রাখা ছিল। একটা অংশে ইলেকট্রিক শক অন করা ছিল অন্য অংশে অফ করা ছিল। দেখা গেল প্রথম ও তৃতীয় গ্রুপের কুকুররা ইলেকট্রিক শক অফ করা সেই অংশে চলে গেল। কিন্তু দ্বিতীয় গ্রুপে কুকুরদের যে বাক্সের মধ্যে রাখা হয়েছিল তারা চুপচাপ যে পার্টিশন বা অংশের মধ্যে দাড়িয়ে রয়ে গেলো। তারা ইলেকট্রিক শক খাওয়ার হাত থেকে বাঁচার জন্য কোন চেষ্টাই করলো না। এর কারণ হিসেবে তারা বলেন যেহেতু আগের বার হাতল নারিয়ে বহু চেষ্টা করা সত্ত্বেও দ্বিতীয় গ্রুপের কুকুররা কোনোভাবেই ইলেকট্রিক শক বন্ধ করতে পারেনি। তাই ওরা এবার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আর চেষ্টাই করেনি। যেটাকে সাইকোলজির ভাষায় হেলপ্লেসনেস বলা হয়।
সার্কাসের হাতিদেরও ঠিক একই কাজ করতে দেখা যায়। ছোটবেলায় সার্কাসের হাতির বাচ্চাদের একটা পাতলা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়, তখন তারা খুব চেষ্টা করে পালানোর। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও তখন পালাতে না পারায় একটা সময় চেষ্টা করাই বন্ধ করে দেয়। পরে যখন হাতিরা বড় হয়ে যায় তখন সেই হাতিটা কে ঠিক একই পাতলা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। যদিও বড় হওয়ার পর হাতিটা চাইলে এক ঝটকায় নিজেকে মুক্ত করে নিতে পারে। তবু উক্ত হাতিটি নিজেকে ছাড়ানোর কোনো চেষ্টাই করেনা। এই জিনিসটা আমাদের মানুষদের সাথে ঘটে। যখন বহুদিন ধরে চেষ্টা করার পরও জীবনে সফলতা ধরা দেয় না, তখন একটা সময়ের পর গিয়ে আমরা চেষ্টা করাই বন্ধ করে দিই। আমরা নিজেদেরকে হেলপ্লেস বলে মেনে নিয়ে একটা ভিকটিম মেন্টালিটি নিয়ে বাঁচতে শুরু করি। নিজের লাইফটাকে উন্নত করার চেষ্টা করাই বন্ধ করে দিই। ভুলে যাই যে আমরা কেমন ভাবে নিজের জীবন গড়ে তুলতে চাই সেটা বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা সব সময় আমাদের হাতে থাকে। তাই জীবনে হার মেনে নেওয়ার আগে চেষ্টা করা বন্ধ করে দেওয়ার আগে নিজেকে নিজে একবার প্রশ্ন করুন। আপনিও সেই সেকেন্ড গ্রুপের কুকুর গুলোর মতন মতো হেলপ্লেসনেস শিকার হচ্ছেন না তো।
প্রথম থেকে কাজ করা ছেড়ে দাও না হয় বেটার কিছু কর:
সাউথ ওয়েস্ট এয়ার লাইন্সের ঐতিহাসিক সফলতার পিছনে যে কারণটা ছিল। সেটা হল বাকি লাইনগুলো যখন তাদের কাস্টমারদের একসাথে বহু সার্ভিস অফার করতে পারার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল। যেমনঃ ফাস্ট ক্লাস সিট, রেসেরভেশন, ইত্যাদি ইত্যাদি। সাউথ ওয়েস্ট এয়ারলাইন্স ঠিক করেছিল যে, তারা একসাথে এত কিছু করার চেষ্টা না করে একটাই জিনিস তারা সব থেকে ভালো ভাবে করার চেষ্টা করবে। সেটা হল প্যাসেঞ্জারদের পয়েন্টে পয়েন্টে নিয়ে যাওয়া। তরার ঠিক করলো যদি তারা এত কিছু একসাথে করার চেষ্টা না করে। শুধু প্যাসেঞ্জারদের কম খরচে এবং কম সময়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারে, তাহলে সফলতা তাদের কাছে এসে নিজে ধরা দেবে। তাদের ঐতিহাসিক সফলতা দেখে কন্টিনেন্টাল এয়ারলাইন্স এর পরে ঠিক একই জিনিসটা করার চেষ্টা করে।
কিন্তু তারা তাদের ননসেন্স ফ্যাসিলিটিজ যেমন: ফাস্ট ক্লাস সিট, রিজার্ভেশন, এসব গুলো বন্ধ করতে রাজি ছিল না। তারা মনে করেছিল যে তারা সবকিছু একসাথে চালিয়ে যেতে পারবে। পরে তারা কন্টিনেন্টাল লাইট নামে একটা সাউন্ড ক্রিয়েট করে কম দামে সার্ভিস অফার করতে শুরু করে। কিন্তু একসাথে দুটো চালাতে গিয়ে তারা কোনটাই সঠিকভাবে করে উঠতে পারে না। এবং ফল স্বরূপ তাদের কয়েক মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি সম্মুখীন হতে হয়েছিল। আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও আমরা এই ভুলটা করে থাকি। একাধিক টাস্ক করতে যায় এবং কোনটাই ছেড়ে দিতে না চেয়ে সবগুলো আমরা চেষ্টা করি। এবং সমস্ত কাজ গুলো একসাথে সমানভাবে চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যায়।
পরে নিজেই নিজের জীবনে আধার ডেকে আনি। যদি আপাতত আপনার জীবনের লক্ষ্য হয় পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা তাহলে অযথা বসে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া, পাবজি খেলা এই সমস্ত কাজ গুলোকে নিজের দৈনন্দিন জীবন থেকে সরিয়ে ফেলে পড়াশোনা করা উচিত। যেটা আপনার জন্য এখন সবথেকে এসেনশিয়াল শুধুমাত্র সেটাকে ভীষণ ভালো ভাবে করার চেষ্টা করতে শুরু করেন। আজকের কথাটার অর্থ এই নয় যে, কিভাবে বেশি কাজ শেষ করা যায় তা নিয়ে কাজ করা। বরং এর অর্থ হলো কিভাবে সঠিক কাজগুলো শেষ করা যায়। এটার অর্থ এটাও না যে খাটনি করতে যায় না বলে কম কাজ করা, এটার অর্থ হল নিজের সময় এবং শক্তিকে সর্বোচ্চ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বিনিয়োগ করে শুধুমাত্র এসেন্সিয়াল কাজগুলো সম্পন্ন করা। এসেন্সিয়াল অর্থ কাজগুলো অত্যন্ত ভালোভাবে শেষ করা যাতে জীবনের সর্বোচ্চ সফলতা অর্জন করা যায়। আপনি চাইলে আরও বিস্তারিত জানার জন্য লিঙ্কে ভিজিট করে এই বই কিনে পড়তে পারেন। আশা করি লেখাটা আপনাকে একজন এসেনশিয়ালস হয়ে ওঠার জন্য উৎসাহ যোগাবে এবং নিজের ডেইলি রুটিন থেকে নোটগুলোকে সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে সাহায্য করবে।